বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে নিবেদিত স্মারক স্থাপনা - জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্হপতি, খ্যাতনামা স্হপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন । ১৯৭৮ সালে সৌধ নির্মাণের উদ্দেশ্যে নকশার জন্য একটি জাতীয় প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। ৫৭ জন স্হপতির মধ্যে থেকে স্হপতি মঈনুল হোসেনের নকশাটি নির্বাচিত হয়। এছাড়া আশেপাশের অন্য সকল নির্মাণ কাজের স্হাপত্য নকশা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের স্হাপত্য অধিদপ্তর।
পুরো প্রকল্পটি তিন পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায় শুরু হয় ১৯৭২ সালে। ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের ভূমি সংগ্রহ ও রাস্তা নির্মানের কাজ করা হয়। ১৯৭৪ - ১৯৮২ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মান করা হয় - গণকবর, হেলিপ্যাড, পার্কিং, পেভমেন্ট। ব্যয় হয় ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। ১৯৮২ সালে তৃতীয় পর্যায়ে স্হাপন করা হয়, কৃত্রিম লেক, সবুজ অঙ্গন, ক্যাফেটেরিয়া এবং মূল স্মৃতি সৌধটি। এই পর্যায়ে ব্যয় হয় ৮৪৮.৬৫ লক্ষ টাকা।
অসমান উচ্চতা এবং সতন্ত্র ভিত্তির উপরে সাতটি ত্রিভুজাকৃতির প্রাচীর নিয়ে সৌধটি গঠিত। দেয়াল গুলো ছোট থেকে বড় এই ক্রমে সাজানো হয়েছে। এই সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ভিন্ন পর্যায়কে নির্দেশ করে। ১৯৫২ -র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ - এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হয়েছে। কাঠামোটির সর্বোচ্চ বিন্দু ১৫০ ফুট ঊচু। কাঠামোটি এমনভাবে বিন্যস্ত যে, ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে কাঠামোটি ভিন্ন ভিন্ন অবকাঠামোয় পরিদৃষ্ট হবে।
সমগ্র কমপ্লেক্সটি ১০৮.৭ একর। স্হপতি মঈনুল হোসেন, মূল স্তম্ভটি সিমেন্ট - পাথরের কনক্রিটে নির্মান করলেও সৌধটির অন্যান্য অবকাঠামোতে লাল ইট ব্যবহার করেছন। যেটি মূল সৌধের গাম্ভীর্যকে বাড়িয়েছে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে - স্মৃতি সৌধটি অক্ষ বরাবর চোখে পড়ে, কিন্তু মূল বেদীতে পৌছবার আগে, অনেক উচু নিচু এলাকা, পেভমেন্ট পার হতে হয়। এ সবকিছুই স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক।